মাওলানা মিরাজ রহমান, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ (প্রিয়.কম): আল-কোরআনের নাম সর্বমোট কয়টি তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আল্লামা জারকাশি তার ‘আল বুরহান ফি উলুমিল কুরআন’ গ্রন্থে আল হাররালির বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, তিনি আল কুরআনের নব্বইয়েরও অধিক নাম উল্লেখ করেছেন। (দেখুন জারকাশি, আল বুরহান ফি উলুমিল কুরআন, ১/২৭৩)
তবে আল্লামা জারকাশি নিজে তার গ্রন্থে কেবল ৫৫টি নাম উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ফায়রুজ আবাদি তার গ্রন্থ বাসাইরু জাইত তামিজে বলেছেন যে, আল্লাহতায়ালা আল কুরআনের ১০০ নাম উল্লেখ করেছেন।’ (ফায়রুজ আবাদি, বাসায়ের জুবিত তাময়িজ, ১/৮৮)। তবে তিনিও কেবল ৯৩টি নাম উল্লেখ করেছেন।
ড. খামসাবি ৭২টি মূল শব্দ থেকে রূপান্তরিত ৯৯টি নাম উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে সালেহ আল বালিহি (র.) মাত্র ৪৬টি নাম উল্লেখ করেছেন। তার বিশ্বাস যে আল কুরআনের অধিকাংশ নাম প্রকৃত অর্থে আল কুরআনের বিশেষণমাত্র। তা আল কুরআনের নাম হিসেবে আসেনি। (সালেহ আল বালিহি, আল হুদা ওয়াল বায়ান ফি আসমাইল করআন, পৃষ্ঠা ৪৪ (ফাহদ আররুমি থেকে সংগৃহীত, পৃষ্ঠা ২৬)।
আল কুরআনের কয়েকটি মৌলিক নাম : পবিত্র কুরআনের কয়েকটি মৌলিক নাম ও উল্লেখিত আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. আল কুরআন
২. আল কিতাব : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি এক কিতাব নাজিল করেছি, যাতে তোমাদের জন্য উপদেশ রয়েছে, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?’(সুরা আল আম্বিয়া: ১০)। [এ আয়াতে জিকর শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে: একটি উপদেশ আর অপরটি সম্মান ও মর্যাদা। অর্থাৎ যে এ কুরআন শিক্ষা করে এবং তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, সে-ই মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হবে।]
৩. আল ফুরকান : ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি বরকতময় যিনি তার বান্দার ওপর ফুরকান নাজিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে’। (সূরা আল ফুরকান: ১)।
৪. আজ-জিকর: ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হেফাজতকারী’। (সূরা আল হিজর:৯)।
৫. আত-তানজিল : ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নিশ্চয় এ কুরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাজিলকৃত’। (সূরা আশ-শুআরা:১৯২)। তবে এসব নামের মধ্যে ‘আল-কুরআন’ ও ‘আল কিতাব’ই সমধিক ব্যবহৃত।
আল কুরআনের কিছু গুণবাচক নাম : আল্লাহতায়ালা আল কুরআনের বেশ কিছু গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো নিম্নরূপ-
১. আন-নুর বা আলো : ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা ইমান আনো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসুলের প্রতি এবং এ যে আলো আমি অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি’ । (সুরা: আততাগাবুন)।
২. আল-হাদি বা দিকনির্দেশনা, রহমত বা দয়া-করুণা, শিফা বা আরোগ্য, মাওইজা বা উপদেশ ইত্যাদি। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।’ (সুরা ইউনুস: আয়াত-৫৭)।
এছাড়া আরো রয়েছে,
৩. মুবারক বা বরকতপূর্ণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এটি একটি কিতাব, আমি তা নাজিল করেছি, বরকতময়’। (সূরা আল আনআম:৯২)।
৪. মুবিন বা স্পষ্টকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘তা-সীন; এগুলো আল-কুরআন ও সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত’। (সূরা আন-নামল:১)।
৫. বুশরা বা সুসংবাদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও সুসংবাদ’। (সুরা আন-নামল)।
৬. আজিজ বা সম্মানিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চিয়ই যারা উপদেশ [কুরআন] আসার পরও তা অস্বীকার করে [তাদের অবশ্যই এর পরিণাম ভোগ করতে হবে]। আর এটি নিশ্চয়ই এক সম্মানিত গ্রন্থ’। (সুরা: ফুসসিলাত, আয়াত-৪১)।
৭. মাজিদ বা মর্যাদাপূর্ণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফ; মর্যাদাপূর্ণ কুরআনের কসম’। (সূরা ক্বাফ)।
৮. নাজির বা সুসংবাদদাতা ও বাশির বা ভয় প্রদর্শনকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন এক কিতাব, যার আয়াতগুলো জ্ঞানী কওমের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কোরআনরূপে আরবি ভাষায়। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতএব তারা শুনবে না’। (সুরা: ফুসসিলাত, আয়াত-৩-৪)।
৯. কারিম বা মহিমান্বিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন’। (সুরা: আল ওয়াকিয়া, আয়াত-৭৭)।
১০. আল হাকিম বা প্রজ্ঞাপূর্ণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আলিফ-লাম-রা। এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত’। (সুরা: ইউনুস, আয়াত:১)।
আল কুরআনের বহু নামের হিকমত বা যৌক্তিকতা : এক গ্রন্থের এত নাম কেন, এর কারণ উল্লেখ করে ফায়রোজ আবাদি বলেন, ‘অধিক নাম, বিশেষ্যের মর্যাদা ও কোনো বিষয়ে তার পূর্ণতাকে বোঝায়। আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন যে, সিংহের বহু নাম তার পূর্ণ শক্তিমত্তাকে নির্দেশ করে। অনুরূপভাবে কিয়ামতের বহু নাম থাকা প্রচণ্ডতা ও কাঠিন্যে তার পূর্ণতাকে বুঝায়। চতুর ব্যক্তির বহু নাম থাকা তার চাতুর্যকে বোঝায়। তদ্রুপ আল্লাহ তায়ালার অনেক নাম থাকা তাঁর পরিপূর্ণ আজমত ও বড়ত্বকে বুঝায়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অধিক নাম থাকা তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও অবস্থানকে নির্দেশ করে। একইভাবে আল কুরআনের বহু নাম থাকা তার মর্যাদা ও ফজিলতকে নির্দেশ করে।’ (ফায়রোজ আবাদি, বাসাইরু জাবিত তাময়িজ, ১/৮৮)